স্বদেশ ডেস্ক: বাজারে দামের আগুন। দেশজুড়ে চলছে অস্থিরতা। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিত্যপণ্য। এরইমধ্যে আগুনের তেজ লেগেছে শিশুখাদ্যে। শিশুখাদ্যের অন্যতম গুঁড়ো দুধের দাম ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। বিক্রেতাদের আশঙ্কা রোজার আগে আরও বাড়বে। শুধু দুধ নয়, শিশুদের ব্যবহারিত প্রায় সবকিছুর দাম বাড়তির দিকে। ক্রেতারা বলছেন, সেরেলাক এক কৌটা আগে ৬২০ টাকা করে ক্রয় করেছেন।
এখন তা বেড়ে ৭০০ টাকা হয়েছে। মাসে তিন থেকে চারটা সেরেলাক প্রয়োজন হচ্ছে চার মাসের শিশুর জন্য। এদিকে প্রাইমা-১ আগে ছিল ৬২০ টাকা। এখন তা ৬৬০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিশুদের খাবার কিনতে এসে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে আবার কষ্টকরে অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কম কিনে শিশুর জন্য দুধ ক্রয় করে ঘরে ফিরছেন। প্রাইমা, লেকটোজেন, ডিল্যাক, বায়োমিল, ডানো, ন্যান থ্রি, নিডোসহ সব কিছুর দাম বাড়তি। ফার্মগেটের লাজ ফার্মায় দেখা হয় ক্রেতা শাকিলের সঙ্গে। তিনি বড় মেয়েকে নিয়ে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি তার তিন মাসের বাচ্চার জন্য দুধ কিনতে এসেছেন। কিন্তু দাম বাড়তি শুনে ধাক্কা খেয়েছেন। শাকিল বলেন, গাউছিয়া মার্কেটে একটি শাড়ির দোকানে বিক্রেতা হিসেবে কাজ করি। মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো বেতন পাই। বড় মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা করেছি। এখন তিন মাসের বাচ্চার জন্য দুধ কিনতে এসেছি। বাচ্চা বুকের দুধ কম পাওয়ায় এই বাড়তি খাবারটি খাওয়াতে হয়। এত ছোট বাচ্চাকে তো আর ভাত বা অন্য জিনিস খাওয়াতে পারি না। এভাবে দাম বাড়লে বাচ্চাকে খাওয়াবো কি?
লাজ ফার্মার বিক্রেতারা বলেন, একমাস ধরে সবকিছুর দাম বাড়তি। শতকরা ৫ শতাংশ করে দাম বাড়ছে। শিশুখাদ্য প্রাইমার দাম বেড়েছে ৪০ টাকার মতো। কোম্পানি থেকে জানানো হয়েছে ঈদের আগে আরও দাম বাড়বে। আগে ছিল ৬২০ টাকা এখন তা বেড়ে ৬৬০ টাকা হয়েছে। লেকটোজেন-১: ৫০০ টাকা, লেকটোজেন-২: ৩৫০ টাকা, লেকটোজেন-৩: ৬৫০ টাকা, প্যাকেট ২৪০ টাকা, হরলিকস ১ কেজি ৬৪৫ টাকা। শুধু শিশুদের খাবার নয়, তাদের ব্যবহারিত ডায়াপার, লোশন, তেল, শ্যাম্পু, পাউডার, বেবি বার্থ ইত্যাদি পণ্যসামগ্রীর দামও বাড়তি।
মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রেতা রকি বলেন, শিশুখাদ্যের পাশাপাশি ডানো পুষ্টি ১ কেজি ৪৯০ টাকা, ডিপ্লোমা ১ কেজি ৭০০ টাকা, হরলিকস এক কেজি ৬৪৫ টাকা। কাওরান বাজারের মিতা টি হাউজের বিক্রেতা তারেক হোসেন বলেন, একমাসের মধ্যে সবকিছুতে ৫০-৬০ টাকা করে বেড়েছে। নিম্নমানের স্টারশিপ দুধও এখন এক কেজি ৪৯০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। যেটা আগে ৩৮০ টাকায় কিনেছে। মনে হচ্ছে ব্যবসা ছেড়ে দেই। পরিবার নিয়ে থাকতে কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। সব কোম্পানির কারসাজি। কোম্পানি চাইলে দাম কমাতে পারে। তিনি আরও বলেন, শিশুখাদ্যের পাশাপাশিও খোলা গুঁড়ো দুধ আগে ২৫ কেজির এক বস্তা ক্রয় করতাম ৮ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে আর এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার টাকা।
বিলকিস বেগম বলেন, পড়াশোনা থেকে শুরু করে বড় ছেলের পেছনে অনেক খরচ। এদিকে আবার ছোট ছেলের চারমাস বয়স। বুকের দুধ ঠিকমতো পায় না। সেরেলাক খাওয়াতে হয়। এক মাসে চারটার মতো লাগে। আগে যেটা ৬২০ টাকায় কিনতে পেরেছি এখন সেটা ৭০০ টাকা। এর প্রভাব পড়েছে মাসিক খরচে। আয়ের চেয়ে ব্যয় হচ্ছে বেশি।
৫০ বছরের সালমা বেগম। মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে থাকেন ফার্মগেটের একটি বাসায়। মেয়ে জান্নাতুল একটি সুপারশপে চাকরি করেন। তার তিন মাসের একটি ছেলে রয়েছে। তাকে মায়ের কাছে রেখে প্রতিদিন অফিস করেন। মেয়ের স্বল্প আয়েই চলে তাদের মা-মেয়ের সংসার। সালমা বেগম বলেন, মেয়ে প্রতিদিন সকাল ৮টায় অফিসে চলে যায়। তার তিন মাসের ছেলেকে ফিডার খাইয়ে রাখতে হয় সারাদিন। প্রতিমাসে তিনটি লেকটোজেন খাওয়াতে হয়। এত ছোট বাচ্চা তো দুধ ছাড়া অন্য খাবার খেতে পারে না। মা ছাড়া তাকে বাসায় রাখাও মুশকিল। তিনি আরও বলেন, মেয়ের খুব কম বেতন। আজ সকালে শুধু ভর্তা ভাত খেয়ে আছি। অনেকদিন ধরে মাছ, মাংসের মুখ দেখি না। মেয়ে অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় বাজার নিয়ে আসলে রান্না হবে। এদিকে আবার নাতির খাবার দুধের দাম বেড়ে গেছে। এখন কি করবো, কি খাইয়ে নাতিটিকে সারাদিন রাখবো বুঝতে পারছি না।